আজ পহেলা জুন ২০২৩ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন।
বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়েছে
সিগারেট, সিমেন্ট, মোবাইল ফোন, এলপিজি সিলিন্ডার, প্লাস্টিক পণ্য
সিগারেট দাম বাজেট ২০২৩-২৪
বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রী বলেন, “সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৪৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৮ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করছি।” এছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ৬৭ টাকা ও তদুর্ধ্ব, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১১৩ টাকা ও তদুর্ধ্ব, অতি-উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার মূল্যস্তর ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন তিনি। এই তিনটি মূল্যস্তর এবং এর ওপরে প্রতিটির ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ আরোপের কথাও জানান মন্ত্রী। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা, মধ্যম স্তরের দাম ৬৫ টাকা, উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
আমদানি করা সিগারেট পেপারের বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে সিগারেটের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়ে যাবে। সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও আগের মতোই যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি ফিল্টার বিযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮ টাকা, ১২ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৯ টাকা ও আট শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন।
এছাড়া ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৯ টাকা ও ১০ শলাকার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন মন্ত্রী। জর্দা ও বিড়িতে সম্পূরক শুল্ক আগের মত ৫৫ শতাংশ রাখা হলেও এই দুটি তামাকপণ্যের খুচরা বিক্রির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তিনি। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২৩ টাকা নির্ধারণসহ সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জর্দা ও গুলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
১০ গ্রাম জর্দার দাম ৪০ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ এবং ১০ গ্রাম গুলের দাম ২০ টাকা, সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ রাখা হয়।
সিমেন্টের দাম বৃদ্ধি বাজেট ২০২৩-২৪
বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে প্রতি টন ক্লিংকারের জন্য ৫০০ টাকা শুল্ক দেন সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা। এ ছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা টনপ্রতি ৭৫০ টাকা শুল্ক পরিশোধ করেন। প্রস্তাবিত বাজেটে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের জন্য ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ এবং আমদানিকারকরা ৯৫০ টাকা করা হয়েছে। সুতরং সিমেন্টের দাম বাড়বে যা ২৬ জুম বোজা যাবে।
মোবাইল ফোনের দাম বৃদ্ধি বাজেট ২০২৩-২৪
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। হ্যান্ড সেট সংযোজনে বসছে ৫ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট। এতে বর্তমানে হ্যান্ডসেট আমদানিতে ৫৮ শতাংশ করের বিপরীতে উৎপাদন কিংবা সংযোজনে কর হার দাঁড়াল ১৮ থেকে ২৩ শতাংশের মতো। যার ফলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি বাজেট ২০২৩-২৪
এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির দুটি কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) এবং ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য, এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে।
তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাট ২.৫% বাড়িয়ে ৭.৫% করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২৬ জুন বাজেট ঘোষণার দিন আমদানি শুল্ক ও করসংক্রান্ত প্রস্তাব কার্যকর হবে।
প্লাস্টিক পণ্যের দাম বৃদ্ধি বাজেট ২০২৩-২৪
নতুন বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, কিচেনওয়্যার, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীসহ অনুরূপ যেকোনো পণ্য (টিফিন বক্স ও পানির বোতল ব্যতীত) মূসক হার ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা আগে ছিলো ৫ শতাংশ। যার ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়াবে। এছাড়া টয়লেট টিস্যু (১৮-২৪ জিএসএম), ন্যাপকিন টিস্যু (২০-২৪ জিএসএম), কিচেন টাওয়াল (২৪-২৬ জিএসএম), ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু (১২-১৬ জিএসএম), হ্যান্ড টাওয়াল/পেপার টাওয়াল/ ক্লিনিক্যাল বেড শিট এর মূসক হার ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছেন যা আগে ছিলো ৫ শতাংশ।
এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কিচেন বা অন্যান্য গৃহস্থালি তৈজসপত্র, সেনিটারিওয়্যার এবং যন্ত্রাংশ এর মূসক হার একইভাবে ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে যা আগে ছিলো ৫ শতাংশ।
আরো পড়ুনঃ আজকের তাপমাত্রা কত ডিগ্রি সেলসিয়াস সকল জেলার তাপমাত্রা কত জানুন
বাজেটে যেসব পণ্যের দাম কমেছে বাজেট ২০২৩-২৪
কৃষিজ যন্ত্রপাতি, মিষ্টান্ন, বিভিন্ন ওষুধ, হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেক, বাজেটে বিমানের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ, পশুখাদ্যের কাঁচামাল, অপটিক্যাল ফাইবার ও আমদানিকৃত কন্টেইনার।
কৃষিজ যন্ত্রপাতি বাজেট ২০২৩-২৪
আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের শতকরা ৪.৬৪ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৪.৯৭শতাংশ ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা মোট।
মিষ্টান্নের দাম বাজেট ২০২৩-২৪
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মিষ্টান্ন দ্রাব্যের দাম কমানোর কথা উঠেছে। গত অর্থবছরের ১৫শতাংশ ভ্যাট বরাদ্দ ছিলো এর খাতে নতুন অর্থবছরে এটি ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন ওষুধ
ম্যালেরিয়া ও যক্ষা নিরোধক ওষুধ এর উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ১০০টি কাঁচামাল ও ডায়াবেটিক ওষুধের ৩টি কাঁচামাল করছাড়ের আওতায় আনা হয়েছে। যার ফলে দাম কমেছে ম্যালেরিয়া ও যক্ষা নিরোধক ওষুধ এবং ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দামে।
নারী ও তরুণদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা
দেশের নারী ও তরুণদের উদ্দাক্তা হতে এবং নিজের পায়ে দাড়াতে এই উদ্দেক নিয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে তরুণদের জ্ঞানভিত্তিক, দক্ষ ও উপযুক্ত কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাজেট ২০২৩-২৪
চলতি অর্থবছর ২০২৩-২৪ এ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা।
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News পেজ)