Info

বিবাহের খুতবা আরবী ও বাংলা | বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম

বিবাহের খুতবা আরবী ও বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম জানতে চান অনেকেই। বিবাহ বাংলা শব্দ, আরবিতে বিবাহকে নিকা বলে। ইসলাম ধর্মে প্রত্যেক নর-নারীর জন্য বিবাহকে ফরজ করা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে মানব জীবনের একটি নির্দিষ্ট বয়স পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া প্রত্যেক নর-নারীর জন্য আবশ্যক। আজকে আমরা বিবাহের খুতবা আরবী ও বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করব।

বিবাহের খুতবা আরবী ও বাংলা

ইসলাম ধর্ম বিবাহের নিয়ম-কানুন ও শর্ত

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ একই সাথে বসবাস করার একমাত্র বৈধপন্থা বিবাহ। ফলে মানুষ হিসেবে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ ও মানসিক শান্তি লাভের জন্য বিবাহই তার একমাত্র সমাধান। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন,

” তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ হীন, তাদের বিবাহ সম্বোধন করে দাও। এবং তোমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম পরায়ন তাদেরও বিবাহ দিয়ে দাও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, আল্লাহর নিজ অনুগ্রহে সচ্ছল করে দিবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় সর্বজ্ঞ। ” (সূরা নূর, আয়াত ৩২ ও ৩৩)

চলুন জেনে আসি ইসলাম ধর্মে বিবাহের সঠিক নিয়ম কানুন।

বিবাহের মৌলিক ভিত্ত

১. বিবাহের জন্য সবার প্রথমে বর ও কনের স্পষ্ট সম্মতি থাকতে হবে।

২. হিজাব বা প্রস্তাবনা অর্থাৎ বরের কাছে কনের অভিভাবক ( উকিল পক্ষ) পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থাপন করা।

৩. উকিল পক্ষের প্রস্তাবের উত্তরে বরের তিনবার কবুল বলে সম্মতি সূচক সাড়া প্রদান করা।

বিবাহের শর্তাবলী ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম

ইসলামের বিবাহের জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট শর্তের কথা বলা হয়েছে। নিচে বিবাহের শর্তাবলী পর্যায়ক্রমে দেয়া হলো

১. ইসলাম ধর্মে পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র পাত্রী নির্বাচন।

২. বিবাহে পাত্র-পাত্রী উভয়ের স্পষ্ট সম্মতি থাকা। তবে কুমারী মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে স্পষ্ট মতামতে লজ্জাশীলতা কাজ করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিয়ের প্রস্তাবে যদি সে চুপ থাকে তাহলে বিয়েতে তার সম্মতি রয়েছে বলে মনে করা হয়।

৩. বিবাহের পাত্র পাত্রীর উভয়ের অভিভাবকের সম্মতি থাকা।

৪. সুস্থ মস্তিষ্কবান দুজন সাক্ষী থাকা।

৫. মোহরানা

৬. পাত্র পাত্রীর বয়স ( ছেলের ন্যূনতম ২১ মেয়ে নূন্যতম ১৮)

ইসলাম ধর্মে বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম বাংলাদেশের আইনে

এই শর্তানুসারে বাধ্যতামূলক শর্ত হলো বরের বয়স ন্যূনতম ২১ এবং কনের বয়স ন্যূনতম ১৮ হওয়া । তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বর-কনেকে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। এরপর পাত্র ও পাত্রীকে ইসলামী বিধান অনুসারে উভয়পক্ষের সাক্ষীর সামনে একজন উকিল বা কাজি’র উপস্থিতিতে সম্মতি জানাতে হয়। সাক্ষী নির্বাচনে, ২ জন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।

সে ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে একজন পুরুষের সাক্ষ্য দুজন নারী সাক্ষ্যের সমান নয়। মুসলিম বিবাহ আইনে একজন নারীকে বিয়ে করতে হলে “দেনমোহর” দেয়া বাধ্যতামূলক। বিবাহের ক্ষেত্রে দেনমোহর হলো একটি আর্থিক নিশ্চয়তা যার বিনিময়ে একজন নারী তার বিবাহিত পুরুষ সঙ্গীর জন্য হালাল বা সিদ্ধ হোন। ইসলাম ধর্মমতানুসারে এই দেনমোহর সম্পূর্ণ অর্থ আদায় করে দিতে হয়, অন্যথায় দেনমোহর কখনোই মাফ হয় না। বাংলাদেশ মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং এই দায়িত্ব পুরুষের।

বিবাহের খুতবা আরবি

ইসলামী সুন্নতি তরিকায় বিবাহের জন্য প্রথমেই বিবাহের খুতবা পাঠ করতে হবে। এরপর দুজন সাক্ষী ( মেয়ের পিতা বা অভিভাবক) বলবেন, আমি আমার মেয়েকে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম প্রতিউত্তরে ছেলে বলবেন আলহামদুলিল্লাহ কবুল করলাম। নিচে বিবাহের খুতবা আরবি দেয়া হলো।

إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه .ونعوذ بالله من شرور انفسنا ومن سيئات اعمالنا. من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له.
واشهد ان لا اله الا الله وحده لا شريك له.واشهد ان سيدنا ومولانا محمد عبده و رسوله.
الذي أُرسل الى الناس كافةً بشيرا ونذيرا. وداعيا الى الل بإذنه سراجا وقمرا منيرا .
‏اما بعد . فأعوذ بالله من الشيطان الرجيم. بسم الله الرحمن الرحيم.
يا أيها الذين أمنوا اتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون
منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء. واتقوا الله الذي تساءلون به والارحام .ان الله كان عليكم رقيبا
وقال تعالى يا ايها النبي يا ايها الذين امنوا اتقوا الله وقولوا قولا سديدا .يصلح لكم اعمالكم ويغفر لكم ذنوبكم ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما

وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم. اذا تزوج العبد فقد استكمل نصف الدين فليتق الله فی النصف الباقي.
وقال عليه الصلاه والسلام .النكاح سنتي فمن رغب عن سنتي فليس مني

বিয়ের খুতবা আরবি বাংলাই উচ্চারণ

ইন্নাল হামদা লিল্লাহি নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়া নাঊযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনা, মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদ্বিল্লালাহ, ওয়া মাই ইউদ্বলিল ফালা হাদিয়া লাহ।ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ, আল্লাযি উরসিলা ইলান্না-সি কা-ফ্ফাতাম বাশীরাও ওয়া নাযিরা।

ওয়া দা-ইয়ান ইলাল্লা-হী বিইযনিহী ওয়া সিরাজাও ওয়া ক্বামারাম মুনীরা।আম্মা বা’দ: ফাআঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম। বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম। ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা ওয়া বাসসা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কানা আলাইকুম রাকিবা।

ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়া কূলূ কাওলান সাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আ’মালাকুম ওয়াগ ফির লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা।

ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: ইযা তাযাওয়াযাল আব্দু ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দ্বীন‚ ফালইয়াত্তাক্বিল্লাহা ফীন নিসফিল বাক্বী। (সহীহ হাদীস শুয়াবুল ইমান)
ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: আন্নিকাহু সুন্নাতী, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। (সহীহ)

আরো পড়ুন: ঈদের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস ২০২৩

বিবাহের খুতবা বাংলা

নিশ্চয়ই প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনা আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়াত করতে পারেনা। এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁ বান্দা ও রাসূল।

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো সত্যিকারে ভয় এবং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।
হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের প্রতিপালক কে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জোড়া কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং সতর্ক থাকো রক্ত আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তিক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।  ( সূরা নিসা আয়াত ০১ )

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মক্ষেত্র ত্রুটি মুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে। ( সূরা আহযাব আয়াত ৭০-৭১ )

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত।

অতঃপর হে মুসলিমগণ আল্লাহ বলেছেন: এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম যে তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গী-সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও। এবং তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক ভালোবাসা ও দোয়া। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। ( সূরা রূম আয়াত ২১ )

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বিয়ে আমার সুন্নত বা রীতি। কাজেই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত পালন করবে না সে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের বর্ধিত সংখ্যা দিয়ে অন্যান্য জাতির কাছে গৌরব প্রকাশ করব।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্তানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ রাখে না সে যেন রোজা রাখে। (সহীহ মুসলিম)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)

4.9/5 - (10 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button