সনেট কাকে বলে~সনেটের বৈশিষ্ট্যসমূহ

আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় সনেট কাকে বলে? সনেট এর বৈশিষ্ট্য অথবা, সনেটধর্মী কবিতা বলতে কী বোঝয় ?

সনেট কাকে বলে~সনেটের বৈশিষ্ট্যসমূহ

সনেট কাকে বলে

ইতালীয় ‘Sonatta’ (সনেটা) শব্দ থেকে সনেট কথাটির উদ্ভব, যার অর্থ মৃদু ধ্বনি বা গান। ইতালীয় ভাষাতেই সনেটের প্রথম বিকাশ হয়েছিল । ফ্রান্সেসকো পেত্রার্ককে (১৩০৭-১৩৭৪) এর জনক বলে বিবেচনা করা হয় । সনেট একপ্রকার মন্ময় গীতিকবিতা, চৌদ্দ পঙক্তির মাধ্যমে যেখানে একটি বিশেষ ছন্দরীতি অনুসরণ করে একটি অখণ্ড ভাবকল্পনা অথবা অনুভূতি কণা আত্মপ্রকাশ করে। ইতালীয় বা পেত্রার্কীয় সনেটে দুটি ভাগ থাকে। প্রথম ভাগে আটটি ও দ্বিতীয় ভাগে ছয়টি পঙক্তি থাকে, যাকে অষ্টক ও ষটক বলা হয়।

অষ্টকের পঙক্তিগুলোর মিলবিন্যাস গঘঙ গঘঙ। অষ্টকের প্রথম আট লাইনে যে ভাব কল্পনার ইঙ্গিত করা হয়, ষটকে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতি চরণ ৮+৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিভক্ত থাকে। Shakespeare সনেটে অষ্টক ও ষটক বিভাগ মেনে চলেননি। Milton এবং Wordsworth ইতালীয়ান সনেটের পন্থানুগ। পেত্রার্কের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একাধিক এলিজাবেথীয় কবি পারম্পর্য এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সনেটগুচ্ছ রচনা করেছেন, যার মধ্যে এক ধরনের পটের আভাস পাওয়া যায়। Shakespeare রচনা করেছেন ১৫৪টি সনেটের একটি সিকোয়েন্স (Sequence)। সিডনি এবং স্পেন্সার রচনা করেছিলেন যথাক্রমে অ্যাস্ট্রোফেল অ্যান্ড স্টেলা (১৫৮০ এবং অ্যামোরেট্টি ১৫৯৫) সনেটগুচ্ছ।

সনেটের বৈশিষ্ট্যসমূহ সনেট কবিতা লেখার নিয়ম

সনেটের বৈশিষ্ট্য খুঁজতে গেলে দেখা যায় যে, সনেট নির্মাণ-নৈপুণ্য বিশেষ একটি আঙ্গিক কুশলতার উপর নির্ভর করে। এর আঙ্গিক বিশেষ রীতিসম্মত হওয়ায় অনেক কবি একে কবি কল্পনার স্ফূর্তির পক্ষে প্রতিবন্ধক মনে করেন। Wordsworth এ বন্ধনকে বরং কল্পনাবিস্তারের প্রভূত সহায়ক মনে করতেন, তাই তিনি বলেন :

“……was pastime to be bound
Within the sonnet’s scanty plot of ground.”

অনেকে মনে করেন, সনেটে কবি আত্মজীবনী বিবৃত করেন। সনেট মন্ময় বা ব্যক্তিগত কবিতা, কাজেই কথাটি একেবারে অমূলক নয়। কিন্তু আধুনিক কাব্যের মন্ময়তা এত ব্যাপক যে, যে কোনো বিষয়েই সনেট লেখা যেতে পারে। নিম্নে সনেটের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো :

১. সনেট সাধারণত চতুর্দশ অক্ষর ( কখনো ১৮ অক্ষর) সমন্বিত ১৪টি পঙক্তির কবিতা।

২. এতে একটিমাত্র ভাবের দ্যোতনা থাকে ।

৩. অষ্টক ও ষটকের বিভাগ রক্ষা করা সনাতন রীতি হলেও রবীন্দ্রনাথসহ অনেকে এ নিয়ম মেনে চলেননি ।

8. সনেটের ভাবে গভীরতা ও ভাষায় ঋজুতা থাকবে।

৫. বিশেষ নির্মাণরীতি অনুসরণ করতে হয় বলে সনেটের স্বতঃস্ফূর্তি অন্যান্য গীতিকবিতার তুলনায় কম ।

৬. সনেটে গীতিকবিতা সুলভ তরল ভাবোচ্ছ্বাসময় অনিয়ন্ত্রিত আবেগ প্রকাশের অবকাশ নেই। ভাষা ও ছন্দ ব্যবহারে নেই স্বেচ্ছাচারিতার কিছুমাত্র সুযোগ । সনেটে সবসময়ই একটি সুমহান, ওজস্বী ও মহিমা ব্যঞ্জক গাম্ভীর্য থাকে ।

৭. আত্মভাবমূলক স্বয়ংসম্পূর্ণ গীতিকবিতা বলে সনেটের ভাষায় থাকে একটি নিটোল পরিমিত, পরিচ্ছন্নতা, স্পষ্টতা, প্রাঞ্জলতা, প্রাণবন্ততা, স্বচ্ছতা ও সুমার্জিত মহিমাময়তা।

৮. গঠনগত দিক থেকেও সনেট সবসময় সংক্ষিপ্ত ও স্থাপত্যধর্মী-তার গতি সংযত ও সংহত।

৯. সুনির্দিষ্ট অবয়বের মতো সনেটে একটি স্থির কেন্দ্রাতিগ লক্ষ্যাভিসারই রূপায়িত হয়ে ওঠে। ফলে চিন্তার স্বচ্ছতা ও
শৃঙ্খলা, সুস্থির সংযম ও সংহতি সব সময়ই অত্যাবশ্যক। অত্যাবশ্যক মিত্রাক্ষরগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর · সুদৃঢ়, শ্রুতিমধুর, নিপুণ এবং নিখুঁত সাম্য স্থাপন ও ক্লান্তিকর একঘেয়েমি দায়সার, রীতির পরিহার।

১০. বাংলা সনেটে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের অন্তর্গত এবং মাত্রাবিন্যাস ৮ + ৬ = ১৪ এ সীমাবদ্ধ। অবশ্য ৮ + ১০ = ১৮ মাত্রার মহাপয়ারের চরণেরও সনেট রচনার রীতি স্বীকৃত ও নিয়মিত হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন: বনলতা সেন কবিতার প্রশ্ন উত্তর 

(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram  পেজ)

Rate this post

Leave a Comment

error: You are not allowed to print preview this page, Thank you
×