Info

বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা দেখুন

আজকে আমরা কথা বলবো বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা, বাজরিগার পাখিকে কি কি খাওয়ানো যায়? , দাম পাখি পরিচিতি সহ সকল বিস্থারিত। তাহলে চলুন দেখে আসি ।

বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা

বাজরিগার পাখি পরিচিতি

বাজরিগার পাখি খাঁচায় পালনের জন্য বহুল প্রচলিত অতন্ত পরিচিত একটি পাখি। পাখিটি লিট্টল প্যারাকিট নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ পাখি পালন করা হয়। বাজরিগার নাম ছাড়াও এ পাখির নাম রয়েছে জেব্রা প্যারট, ক্যানারী প্যারট, কমন পেট প্যারাকিট এবং বদরী নামেও পরিচিত। এছাড়া এ পাখির আরও নাম রয়েছে যা এক এক অঞ্চলে এক এক নামে পরিচিত। সাধারণত এ পাখি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব ও দক্ষিণ -পশ্চিম উপকূল সহ বনাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বাসস্থান এর উপর ভিওি করে বাজরিগার পাখির আকার ও ওজন এর পার্থক্য দেখা যায়।

খাঁচায় পালনের পাখি লম্বায় ৭ ইঞ্চি থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে ও বনাঞ্চলের এ পাখির আকার লম্বায় ৬.৫ ইঞ্চি থেকে ৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তেমনি ততরূপ ভাবে ওজনের দিক থেকে যদি বিবেচনা করা হলে খাঁচায় থাকা বাজরিগার পাখি ও বনাঞ্চলের বাজরিগার পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। খাঁচায় থাকা বাজরিগার পাখির ওজন ৩৫ গ্রাম থেকে ৪০ গ্রাম হয় এবং বনাঞ্চলের থাকা বাজরিগার পাখির ওজন ২৫ গ্রাম থেকে ৩৫ গ্রাম হয়ে থাকে। বাজরিগার পাখি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় সাধারণত ৮মাস থেকে ৯ মাস বয়সে।

যখন বাজরিগার পাখি ডিম পারে তখন একসাথে ৮টি থেকে ১৩টি পর্যন্ত ডিম পেড়ে থাকে। এই ডিম থেকে বাচ্চা বের হতে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় প্রয়োজন হয়। আজ আমরা আলোচনা করবো বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা নিয়ে।তাছাড়া আপনি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি বাজরিগার পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা নিতে পারবেন।

বাজরিগার পাখির খাবার তালিকা

বাজরিগার পাখির খাবার তালিকায় সঠিক ও পুষ্টিমান খাবারের তালিকা প্রয়োজন। যা বাজরিগার পাখিকে সুস্থ রাখবে। নিম্নে খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো:

চিনা ও কাউন মূলত এ পাখির সাধারণ খবার মূলত। তবে পাখির শরীর সুস্থ রাখতে কলবি শাঁকের ডোগা, ধনিয়া পাতা, সন্সি শাঁক প্রতিদিন সলাকে দিবেন তাহলে পাখির প্রাকৃতিক পুষ্টির অভাব থাকবে না। সাথে Mineral Block ( সাগরের ফ্যানা ) অবশ্যই ঝুলিয়া দিবেন। 

গুজি তিল: গুজি তিল এ প্রচুর পরিমানে ভিটামিন থাকে। এটি ব্যবহারে পাখির পালক  উজ্জ্বল থাকে  ও পাখির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

সূর্যমূখী ফুলের বীজ: সূর্যমূখী ফুলের বীজে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি থাকে। যা পাখির দেহে তাপশক্তি উৎপাদন করতে সাহায্য করে। মূলত এটি পাখির শীতকালের খাবার। আপনাকে বলে রাখা ভালো  গরমের সময়ে আপনি সূর্যমূখী ফুলের বীজ পাখিকে খাওয়াবেন না। সূর্যমূখী ফুলের বীজ গরম কালে পাখিকে খাওয়ালে পাখি স্ট্রোক করতে পারে। এ বিষয়টি আপনার অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এটি কেবল শীতের খাবার বাজরিগার পাখির।

পোলাও এর ধান: পোলাওয়ের ধান বাজরিগার পাখির চর্বি কাটাতে সাহায্য করে। চর্বি কাটাতে সাহায্য করা ছাড়াও পোলাওয়ের ধান বাজরিগার পাখিকে ফিট থাকতে সাহায্য করে করে। তাই অবশ্যই বাজরিগার পাখির খাবাড তালিকায় পোলাওয়ের ধান অবশ্যই রাখবেন।

উপরের চারটি উপাদান আপনি মিশিয়ে নিয়ে খাবার তৈরি করতে পারবেন। তবে ৩ নম্বরটি (সূর্যমূখী ফুলের বীজ)  শীতকালে ব্যবহার করবেন।নিচে ১০ কেজি খাবার কিভাবে তৈরি করবেন সে সম্পর্কেও  বলা আছে। বাজরিগার পাখির খাবার তালিকায় সাধারণত চাল বা দানা জাতীয় অংয় থাকে। দানা হিসেবে আপনি ধান, মটরশুঁটি বাজরিগার পাখিকে খাওয়াতে পারেন। সাধারণত শীতকালে রাইস ফিল প্রজাতির ধন এ পাখিকে খাওয়ানো হয় যা বাজরিগার পাখির পুষ্টির জন্য খুবই উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আপনি বাজরিগার পাখিকে এসকল খাবার ছাড়াও অন্যান্য খাবার হিসেবে সিদ্ধ ডিম, কলমি শাক, বরবটি, পালংশাক, গাজর, মটরশুটি, আপেল, পেয়ারা এগুলো আপনি খাওয়াতে পারেন মাঝে মধ্যে।

বাজরিগার পাখির বাচ্চার খাবার

আপনার শখের বাজরিগার পাখি বাচ্চাকে খাবার দিতে আপনাকে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে, কারন বাচ্চা পাখির হজম ক্ষমতা কম থাকে। বাচ্চাদের বয়স যহন ১ থেকে ৭ পর্যন্ত মা পাখিকে চিনা এবংক্যানাড়ি। সাথে সাথে দিতে পারেন ভেজানো গম, ভুট্টা ভাঙ্গা ( ভিজানো ২৪ ঘন্টা )। বাজরিগার পাখির ডিম একই দিনে বাচ্চা ফুটে বের হয় না, সুতরং কখনো যদি লক্ষ্য করেন ছোট বাচাগুলো খাবার কম খাওয়াচ্ছে তাহলে হ্যান্ড ফিডিং করাতে হবে।

বাচ্চার বয়স এ সপ্তাহের বেশি হলে পাখিকে সফট ফুড খেতে দেন। সফট ফুট বলতে ডিমের সাদা অংশ সিদ্ধ করে, বিট, বরবটি। সাথে সবজীও ধনে পাতা, কলমি শাঁকও দিবেন। তাহলে আপনার বাচ্চা খুব দ্রুত বড় হতে থাকবে।

বাজরিগার পাখির ১০ কেজি খাবার তৈরি তালিকা 

কাউন: ৬ কেজি

চিনা : ১ কেজি

গুজি তিল: ০.৫০ কেজি

পোলাও চাল বা ধান: ১  কেজি

ক্যানারি সিড: ০.৫০ কেজি

তবে, মনে করা হয় যে খাদ্য তালিকায় সূর্যমুখী তিল না দিলে ভালো হয়। কাটন সূর্যমূখী ফুলের বীজ ফ্যাট বাড়ায় বাজরিগার পাখির খাবারের দাম ততটাও বেশি নয় । মূলত উপরের সব উপকরণ দিয়ে খাবার তৈরি করলে ভালো হয় আপনি চাইলে ১ কেজি খাবার তৈরি করতে পারবেন আবার তার বেশিও খাবার তৈরি করতে পারবেন। মূলত খাবার তৈরি খরচ নির্ভর করে আপনার উপর সাধারণত ১ কেজি খাবার তৈরি করতে আপনার ৮০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। পাখির সংখ্যার উপর নির্ভর করে আপনি খাবার তৈরি করবেন। এই তালিকায় তৈরি খাবার ৩০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

বাজরিগার পাখির রং,দাম ও রোগ নিরাময়

বাজরিগার পাখির সাধারণত দেখা যায় সুবজ ও হলুদ রংয়ে। তবল বাজরিগার পাখি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: সাদা,নীল ইত্যাদি রং। পাখি প্রেমিরা এই পাখির রং দেখে মুগ্ধ হয়ে  হন। বাজরিগার ছোট বাচ্চা পাখির দাম ২০০ টাকা  থেকে ৩০০ টাকা। সাধারণত বাজরিগার পাখির দাম ৪০০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকা। তবে বাজরিগার এর কিছু পাখির দাম ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বাজরিগার পাখি দেশের প্রায় সবজেলা শহর গুলিতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে আপনি বিভাগীয় শহরের পাখির দোকানে পেতে পারেন খুব সহজেই। বাজরিগার পাখি সাধারণত তেমন অসুস্থ হয়ে থাকে না। তবে রোগের মধ্যে রানিক্ষেত  রোগ হয়ে থাকে। তবে অন্য কোন রোগের লক্ষ্মণ যদি প্রকাশ পায় তাহলে আপনি পশু-পাখির ডাক্তার দেখাবেন। সাধারণত বাজরিগার পাখি ৬ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

আরো পড়ুনঃ দরখাস্ত লেখার নিয়ম

বাজরিগার পাখির খাঁচা কেমন হওয়া উচিত

বাজরিগার পাখির খাঁচা অন্য কোনো  পাখির খাঁচা অন্য পাখির খাঁচা থেকে আলাদা হওয়া দরকার। আমরা আপনাকে কিছু পরামর্শ দিবো খাঁচা তৈরির জন্য:

আকার ও আয়তন: বাজরিগার পাখির খাঁচার আকার হওয়া উচিত ঐ খাঁচায় কতটি পাখি থাকবে, পাখির আকার, আয়তন, খাঁচার মধ্যে পাখির উড়ার জায়গায় নির্ভর করে।

মাটি ও পরিবেশ: সবসময় খাঁচা এমন জায়গায় হওয়া উচিত যেখানে মাটির কাছাকাছি থাকবে খাঁচাটি। আর পাখিরা খাঁচার মধ্যে থেকে যেন প্রকৃতির সব ধরনের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে।

সুরক্ষা: অবশ্যই আপনাকে প্রধানত পাখির সুরক্ষার কথা দেখতে হবে। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খাঁচা তৈরিতে যে খাঁচা শক্ত আছে কিনা। বিশেষ করে বিড়াল ও ইত্যাদি প্রাণী যেন পাখির কিছু না করতে পারে।

বেবি কেইজ: খাঁচা তৈরি করার সময় আপনাকে খাঁচার মধ্যে বেবি কেইজ রাখতে হবে। বেবি কেইজ বলতে বুজায় আপনার পাখির  খাঁচায় মধ্যে ছোট পাখির থাকার জায়গা করে দিতে হবে যাতে বড় পাখি ছোট পাখিদের কখনো বিরক্ত ন করতে পারে।

মেইল ও ফিমেইল কেইজ: আপনাকে অবশ্যই মেইল (পুরুষ)  ও ফিমেল (মহিলা) কেইজ তৈরি করতে হবে।

মেডিকেল কেইজ: যখন কোন পাখি অসুস্থ হবে পাখির জন্য অন্য পাখি যেন অসুস্থ না হতে পারে সে জন্য আপনাকে অবশ্যই মেডিকেল কেইজ তৈরি করতে হবে।

পৃথিবীর সকল পাখি প্রেমী মানুষের কাছে সকল পাখি হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু বাজরিগার পাখি পছন্দ হবে না এখন মানুষ কমই দেখতে পাওয়া যায়। এটি কেবল সখ নয় এটি বর্তমানে ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। বর্তমানে এটি বানিজ্যিক ভাবেও একটি লাভ জনক ব্যবসা। খুব অল্প অর্থ খরচ করে বাজরিগার পাখির খামার তৈরি করা সম্ভব। আমরা আপনাক পূবেই অবহিত করেছি যে বাজরিগার পাখি এক সাথে ৮-১৩ ডিম পারে আর সেই ডিম থেকে বাচ্চা হতে আঠারো দিন সময় লাগে। আপনি যদি বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেন তাহলে বাজরিগার পাখির খামারে প্রতিদিন আপনাকে ২ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা সময় দিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই পাখির সম্পর্কে আগে জেনে নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News,পেজ)

3.5/5 - (19 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button