কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা~কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব

কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা, কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব। কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত চতুর্দশপদী কবিতাবলি থেকে গৃহীত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বোঝার স্বার্থে কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা ও মূলভাব সহজ ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা হলো। তাহলে চলুন দেখে আসি, কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা।

কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা

সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে!

ব্যাখ্যা : সততা →সব সময়, হে নদ →কপোতাক্ষ নদ, তুমি পড়ো মোর মনে →সব সময় কপোতাক্ষ নদকে মনে পড়ে। সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে! অর্থাৎ এই লাইনটিতে কবি তীব্র ব্যাকুলতা নিয়ে প্রকাশ করেছেন যে, হে কপোতাক্ষ নদ তোমাকে আমার সব সময় মনে পড়ে।

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে ;

ব্যাখ্যা : সততা →সব সময়, তোমার কথা ভাবি →কপোতাক্ষ নদের কথা মনে করি, বিরলে → একাকী
অর্থাৎ কবি কপোতাক্ষ নদের কথা সব সময় একাকী বসে ভাবে।

সতত (যেমতি লোক নিশার স্বপনে
শুনে মায়া মন্ত্র ধ্বনি) তব কলকলে
জুড়ায় এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে!

ব্যাখ্যা : সততা তথা সব সময় যেমতি লোক নেশার স্বপনে অর্থাৎ যেমনি ভাবে লোকে নেশার ঘরে স্বপ্নে শুনে মায়া মন্ত্র ধ্বনি তেমনি করে কবি ও ভ্রান্তির ছলনে তথা ভুলের বসে কবির কান, মন জুড়িয়ে যায় কপোতাক্ষ নদীর কলকলে ধ্বনিতে।

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে?

ব্যাখ্যা : কবি বহু দেশে বহু নদ দেখেছে কিন্তু কপোতাক্ষ নদ দেখার তৃষ্ণা তার মেটেনি।অর্থাৎ কপোতাক্ষ নদের মত অন্য কোন নদ তাকে বিমোহিত করতে পারেনি

দুগ্ধ-স্রোতোরুপী তুমি জন্মভূমি স্তনে।
আর কি হবে দেখা? – যতদিন যাবে,

ব্যাখ্যা : মা যেমন তার সন্তানকে গভীর স্নেহে নিজ স্তনে দুগ্ধ পান করান। তেমনিভাবে কপোতাক্ষ কবিকে মায়ের মত পরম যতনে বড় করেছেন। এই কবিতায় কবি কপোতাক্ষ নদের জলকে পরম মমতাময়ী মায়ের দুধের সাথে তুলনা করেছেন। প্রবাসে ( ফ্রান্সে) থাকা অবস্থায় কবি কপোতাক্ষ নদকে গভীরভাবে স্মরণ করে চরম সংশয় প্রকাশ করেছে যে, তার প্রিয় নদের সাথে আর কখনো দেখা হবে কিনা।

প্রজারূপে রাজরূপ সাগররে দিতে
বারি-রূপ কর তুমি ; এ মিনতি, গাবে

ব্যাখ্যা : এই লাইনে কবি কপোতাক্ষকে প্রজা এবং সাগরকে রাজা বিবেচনা করে বলেছেন প্রজা যেমন রাজাকে কর প্রদান করে, তেমনিভাবে কপোতাক্ষও কর হিসেবে সাগরকে জলধারা দিয়ে থাকে।

বঙ্গজ জনের কানে, সখে, সখা-রীতে
নাম তার, এ প্রবাসে মজি প্রেম-ভাবে
লইছে যে তব নাম বঙ্গের সংগীতে।

ব্যাখ্যা : কপোতাক্ষ নদের কাছে কবি আকুল ভাবে মিনতি করেছেন যে, যখন কপোতাক্ষ নদের পাশ দিয়ে বঙ্গজ তথা বাংলার মানুষ যাওয়া আসা করবেন তখন যেন কপোতাক্ষ, কবির কথা তাদেরকে বলেন। সুদূর ফ্রান্সে থাকলেও কবি সব সময় নিজ দেশের প্রিয় নদ কপতাক্ষের কথা ভাবতেন। এবং বঙ্গসঙ্গীতের মাধ্যমে তথা বাংলা ভাষায় গানের মাধ্যমে নিজ দেশের স্মৃতি বিজড়িত প্রিয় কপোতাক্ষ নদের কথা সর্বদা মনে করেছেন।

আরো পড়ুন: বঙ্গভূমির প্রতি কবিতার ব্যাখ্যা

কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা~কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব
কপোতাক্ষ নদ কবিতার ব্যাখ্যা~কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব

কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব বা সারমর্ম

কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচিত একটি চতুর্দশপদী কবিতা। কপোতাক্ষ নদ কবিতাটি কবি প্রবাসে তথা ফ্রান্সে থাকা অবস্থায় লিখেছিলেন। প্রবাসে থাকা অবস্থায় কবি তার জন্মভূমি বাংলাদেশের যশোর জেলার সাগরদাড়ি গ্রামে অবস্থিত শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে স্মৃতিকাতরতার সাথে স্মরণ করেছেন। কবি প্রবাসে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন দেশে অনেক নদ-নদী দেখেছে কিন্তু কপোতাক্ষের মত কোন নদ কবিকে বিমোহিত করতে পারিনি।

কবি স্বপ্নের ঘোরে ভ্রান্তির ছলনায় কপতাক্ষের কলকল ধ্বনি শুনতে পান। কবি কপতাক্ষের জলকে মমতাময়ী মায়ের দুগ্ধের সাথে তুলনা করে বলেন, মা যেমন তার সন্তানকে অতিস্নেহে নিজ স্তনের দুগ্ধ পান করান, তেমনিভাবে কপোতাক্ষ তাকে স্নেহময়ী মায়ের মত করে বড় করেছেন। কবি প্রবাসে থাকা অবস্থায় মনে ভীষণ সংশয় প্রকাশ করেন যে আর কখনো তার প্রিয় কপোতাক্ষ নদের সাথে দেখা হবে কিনা। তাই কবি পরম মিনতির সাথে কপোতাক্ষকে অনুরোধ করেছেন, যেন কপোতাক্ষ কবির স্বদেশের প্রতি ভালবাসা বঙ্গবাসীর কাছে পৌঁছে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram  পেজ)

4.8/5 - (74 votes)

Leave a Comment

error: You are not allowed to print preview this page, Thank you
×