Info

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে ও বাংলায়

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে ও বাংলায় জানতে চান অনেকেই। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়তসহ ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম। রমজান মাস শেষ হলে পবিত্র শাওয়াল মাসের ১লা তারিখে যে ঈদ অনুষ্ঠিত হয়, সেটাই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এদিন সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয় যাকে ঈদুল ফিতরের নামাজ বলে। ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। নিচে ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত সহ ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম বর্ণনা করা হলো।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে ও বাংলায়

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম

পূর্বে উল্লেখিত সময় অনুযায়ী কোন ময়দানে অথবা ঈদগাহে বৃহৎ জামায়াত সহকারে এ নামাজ আদায় করতে হয়। ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য আজান এবং ইকামতের প্রয়োজন হয় না। ঈদুল ফিতরের নামাজে খুতবা পাঠ করতে হয় সেটিও নামাজ আদায়ের পর। ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম হল অন্যান্য নামাজের মত নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বেঁধে ছানা পাঠ করতে হয়। এরপর ইমাম উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার বলে পরপর তিনটি তাকবীর বলবেন এবং মুক্তাদীগণসহ প্রতি তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত ওঠাবেন আবার ছেড়ে দিবেন।

তিন তাকবীরের শেষ তাকবীর অর্থাৎ তিন নাম্বার তাকবীরে যথা নিয়মে হাত বেঁধে ইমাম উচ্চস্বরে সূরা কেরাত পাঠ করবেন। এভাবে অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু সিজদাহ আদায় করে দ্বিতীয় রাকাতে দাঁড়িয়ে ইমাম পুনরায় উচ্চস্বরে সুরা কিরাত পাঠ করবেন। দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কিরাত শেষ হলে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত আরও তিনটি তাকবির বলবেন। তারপর যথা নিয়মে রুকু সিজদাহ শেষ করে শেষ বই থাকে বসে তাশাহুদ দুরুদ শরীফ পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন। এরপর ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে জুময়ার খুতবার ন্যায় দুইটা খুতবা পাঠ করবেন। খুতবা শেষে ইমাম সাহেব হাত উঠিয়ে মুক্তাদীগণসহ মোনাজাত করবেন। এভাবে করে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত অজিত নামাজ আদায় করতে হয়।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবীতে

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআ’লা রাকয়াতা সালাতিল ঈদিল ফিতরি, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তাআ’লা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত বাংলায়

এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল ফিতর নামাজের সুন্নাত কাজ সমূহ | ঈদুল ফিতর নামাজের নিয়ম

ঈদুল ফিতর নামাজের সুন্নত কাজসমূহের মধ্যে রয়েছে প্রথমেই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা এরপর গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করা, চোখে সুরমা লাগানো এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদুল ফিতর নামাজের পূর্বে ইফতার স্বরূপ কোন মিষ্টান্ন আহার করা। অতঃপর যথা শীঘ্রই নামাজের ময়দানে অবস্থান করা সেক্ষেত্রে ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীরে তাশরিফ তথা, “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল্ হামদ” পাঠ করা। অতঃপর ঈদুল ফিতর নামাজের পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা।

ঈদুল ফিতরের নামাজের কতিপয় মাসালা

১। যাদের প্রতি জুময়ার নামায আদায় করা ফরয, ঈদের নামায তাদের প্রতিই আদায় করা ওয়াজিব। আর যাদের প্রতি জুময়ার নামায আদায় করা ফরয নয়, তাদের প্রতি ঈদের নামায আদায় করাও ওয়াজিব নয় ।

২। ঈদের খুৎবা পাঠ করা সুন্নাত। অবশ্য জুময়ার খুৎবা পাঠ করা ওয়াজিব।

৩। ঈদের খুৎবা কোন নাবালেগ পড়লেও জায়েয হয়, পক্ষান্তরে জুময়ার খুৎবা কোন নাবালেগ পড়লে জায়েয হবে না ।

৪। ঈদের নামাযের আগে-পরে কোন নফল নামায নেই।

৫। একই ব্যক্তি একস্থানে ঈদের নামাযের ইমামতি করে আবার অন্য স্থানে একই ঈদের নামায পড়াতে পারবে না। অবশ্য খুৎবা পাঠ করতে পারবে।

৬। শুক্রবার দিন ঈদের নামায পড়ে যথাসময়ে জুময়ার নামাযও আদায় করতে হবে।

৭। বহু সংখ্যক লোক ঈদের জামায়াত না পেলে দ্বিতীয় জামায়াত করে তা আদায় করতে পারবে।

সদকায়ে ফিতর কি

ঈদুল ফিতরের দিন সাহেবে নেসাব অর্থাৎ নির্দিষ্ট ধনীদের প্রতি সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। রমযানের রোযার কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি ঘটলে ফিতরের দ্বারা তার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যায় । হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এ সদকা আদায় না করা পর্যন্ত রোযাদারের রোযা আসমানে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং আদায় করা মাত্র মহান আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়।

ফিতরা দেওয়ার নিয়ম

১। গৃহকর্তা ফিতরা দেবে নিজের পক্ষ হতে।

২। নিজের দরিদ্র নাবালেগ সন্তান-সন্তুতিগণের পক্ষ থেকেও এটা তাকে আদায় করতে হবে।

৩। ঈদের দিন ফজরের নামাযের পূর্বে যদি কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার পক্ষ হতেও ফিতরা আদায় করতে হবে। অবশ্য যদি ঐ সময় কেউ মারা যায়, তবে তার পক্ষ হতে ফিতরা দিতে হবে না । ঈদের দিন সূর্যোদয়ের পর কারো জন্ম হলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না। আবার ঐ সময় কেউ মারা গেলে তার ফিতর লাগবে। সন্তান-সন্তুতি বা স্ত্রী যদি সাহেবে নিসাব হয়, তবে তাদের ফিতরা তারা নিজেরাই আদায় করবে।

আরো পড়ুন: ফিতরা কত টাকা ২০২৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফিতরা গ্রহণের যোগ্য লোকগণ

১। দরিদ্র ভাই-বোনেরা

২। গরীব প্রতিবেশীগণ

৩। নিকটবর্তী বা দূরবর্তী মিসকীনগণ।

৪ । গরীব তলেবে ইলম বা আলেম-ওলামাগণ। মোটকথা, ফিতরা দেয়ার যোগ্য নয় এরূপ গরীব মুসলমানগণই ফিতরা গ্রহণের যোগ্য।

৫। একজনের ফিতরা একজনকে দেয়াই উত্তম। তবে একাধিক ব্যক্তিকেও দেয়া য়ায়।

৬। বহুজনের ফিতরাও একজনকে দেয়া যায়। ৭। কোন প্রতিষ্ঠান বা মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট-পুল ইত্যাদিতে দেয়া জায়েয নয়।

ইসলামে ফিতরার পরিমাণ

অর্ধ ছা’ অর্থাৎ এদশেীয় ৮০ তোলা সেরের পৌণে দু’সের। এ পরিমাণ গম, আটা, কিংবা ছাতু দ্বারা ফিতরা আদায় করতে হয়। মনে রাখবে, উল্লেখিত বস্তুসমূহের পরিবর্তে উক্ত পরিমাণ চাউল দ্বারা ফিতরা দিলে আদায় হবে না । অবশ্য ঐ বস্তুসমূহের উল্লেখিত পরিমাণের মূল্য দ্বারা যে পরিমাণ চাউল পাওয়া যায়, সেই পরিমাণ চাউল দ্বারা ফিতরা দিলে জায়েয হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)

5/5 - (58 votes)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button