তারাবির নামাজ কত রাকাত? তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবি। তারাবি নামাজের দোয়া, নিয়াত ও ফজিলত। মাহে রমজান মাস মানেই মুসলমানদের কাছে ভোররাত্রে সেহরি খেয়ে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পর পুনরায় আল্লাহর সান্নিধ্যে তারাবির নামাজ আদায় করা। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রাখার পর রাত্রে তারাবি নামাজ আদায় করবে আল্লাহ খুশি হয়ে তার পিছনের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আজকের প্রতিবেদনে আমরা তারাবি নামাজের দোয়া, নিয়াত ও ফজিলত সম্পর্কে আলোকপাত করবো ।
এছাড়াও তারাবি নামাজ পড়া ফরজ, সুন্নাত নাকি নফল সে সম্পর্কেও আলোকপাত করবো। অনেকে আবার দ্বিধায় পড়ে যান তারাবির নামাজ নির্দিষ্ট কত রাকাত? তারাবির নামাজ সম্পর্কিত এ ধরনের সকল বিষয়ে আলোকপাত করা হবে আজকের প্রতিবেদনে। তাহলে দেখে নিচ থেকে দেখে নিন তারাবির নামাজের নিয়ত মোনাজাত ও দোয়া।
তারাবি নামাজ কত রাকাত? | তারাবি নামাজের নিয়ত
বুখারীর শরিফের তৃতীয় খন্ডে ২০০৯ নাম্বার হাদিসে উল্লেখিত রয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন,
“যদি কেউ রমজান মাসে রাতের নামাজ( তারাবি নামাজ) আদায় করে ঈমানের সাথে তাহলে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন “
এ হাদিস থেকে জানা যায় তারাবির নামাজ আসলে কোন ফরজ নামাজ নয় কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত নামাজ অর্থাৎ রমজানে রাতের তারাবি নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। অনেকেই তারাবি নামাজ নির্দিষ্ট কত রাকাত তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ প্রচার করেন। আসলে তারাবি নামাজ কত রাকাত? ২০ রাকাত নাকি ৮ রাকাত? হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
” আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কখনো তারাবির নামাজ ৮ রাকাতের বেশি পড়তে দেখিনি “
এছাড়াও অন্যান্য কোন হাদিসের এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েছে। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবি নামাজ ৮ রাকাত পড়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়ার নির্দেশ দেন। তারপর থেকে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত পড়া হয়।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বলেছেন আমার মৃত্যুর পর খোলাফায়ে রাশেদিন ( হযরত আবু বকর রাঃ ওমর রাঃ ওসমান আলী রাঃ) যেটি বলবেন সেটিই হাদিস শরিফ, তাই আপনারা খোলাফায়ে রাশেদিনের কথা মেনে চলবেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে মক্কা-মদিনা সহ সারা বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলমান রমজানে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েন। তাই যদি বিশেষ কোন শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়ায় উত্তম।
তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবি | তারাবি নামাজ কত রাকাত?
তারাবির নামাজ সর্বমোট ২০ রাকাত আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ প্রত্যেকবার দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। নিচ থেকে তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা ও আরবি দেখে নিন।
দুই রাকাত তারাবি নামাজের নিয়ত আরবিঃ ” নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার ”
দুই রাকাত তারাবির নামাজের বাংলায় নিয়তঃ ” আমি কেবলামুখি হয়ে দু’রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার ”
তারাবি নামাজের দোয়া | চার রাকাত পর পর তারাবি নামাজের দোয়া
রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে রাত্রে তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত আদায় করতে হয় যেটি প্রতিবার দুই রাকাত করে আদায় করতে হয়। তারাবির নামাজে প্রতি বার ৪ রাকাত আদায় করার পর
আরবি দোয়া: ” সুবহানাজিল মুলকি ওয়ালমালাকুতি সুবহানাজিল ইজ্জাতি ওয়াল আজমাতি ওয়ালহাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুতি, সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানুমু ওয়া লা ইয়ামুতু, সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুন মালাইকাতি ওয়ার রূহ”
বাংলায় অর্থ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা, ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী। তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব। তিনি কখনো ঘুমান না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।
তবে তারাবি নামাজের প্রত্যেক চার রাকাত পর নির্দিষ্টভাবে কোন দোয়া পড়া একান্ত জরুরী নয়। এ দোয়ার পরিবর্তে অন্য যে কোন দোয়াও পড়া যেতে পারে।
তারাবির নামাজের মোনাজাত | তারাবি নামাজের ফজিলত
রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর রাত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারাবির নামাজ আদায় করার পর আল্লাহর কাছে মোনাজাতের মাধ্যমে নিজের অতীতের গুনাহের ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয়। নিচে তারাবি নামাজের মোনাজাত আরবিতে বাংলা অর্থ করে বর্ণনা করা হলো। তারাবি নামাজের মোনাজাত আরবিতে
বাংলায় উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন ” তারাবির নামাজ শেষে সাধারণত মোনাজাতটি করা হয়। অনেকেই প্রত্যেক চার রাকাত তারাবির নামাজ শেষে এই মোনাজাতটি করে থাকেন।
তারাবি নামাজের ফজিলত | তারাবির নামাজের মোনাজাত
অনেকে মনে করেন তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। আসলে রোজার সাথে তারাবি নামাজের এমন কোন সম্পর্ক নেই যে তারাবি নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। তবে তারাবি নামাজ পড়ার ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্বর সাথে বলেছেন অর্থাৎ রমজানে রাত্রে তারাবি নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মুসলিম বুখারী শরীফের বর্ণনা করা হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কেউ রমজান মাসে রাতের নামাজ( তারাবি নামাজ) আদায় করে ঈমানের সাথে তাহলে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ” রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস। তাই এই মাসের বরকত হিসেবে আল্লাহ সকল ভাল কাজের সওয়াব ৭০গুন বাড়িয়ে দিয়েছেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ তাহার গুনাহ ক্ষমা পেল না পৃথিবীতে তার মত হতভাগা আর কেউ।
আরো পড়ুন: শরীয়তপুর জেলার সেহরি ও ইফতারের সময়সূচী ২০২৩
(সবচেয়ে আগে সব খবর, সঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)